চুনাখোলা মসজিদ
ষাটগুম্বুজ মসজিদ থেকে প্রায় এক কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে বাগেরহাট সদর উপজেলার ষাটগুম্বুজ ইউনিয়নের চুনোখোলা গ্রামে এ মসজিদটির অবস্থান। ১৯৭৫ সালে বাংলাদেশ সরকার চুনাখোলা মসজিদকে ঐতিহাসিক পুরাকীর্তি হিসাবে ঘোষণা করে এবং প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের আওতায় সংরক্ষণের উদ্যোগ নেয়। ১৯৮৩ সালে ইউনেস্কো ঐতিহাসিক ষাটগম্বুজ মসজিদসহ তৎকালীন ‘খলিফতাবাদ’ নগর রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা ‘খান-উল-আযম উলুঘ খান-ই-জাহান’ নির্মিত প্রাচীন নগরীর অংশ হিসাবে এই মসজিদটিকে ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য’ হিসাবে তালিকাভূক্ত করে। বিবি বেগনী মসজিদের উত্তর দিকে অবস্থিত চুনাখোলা মসজিদটি বর্তমানে একটি ফসলে মাঠের মাঝে অবস্থিত। তবে নিশ্চয়ই এ মসজিদের আশেপাশে পূর্বে জনবসতি ছিল।
চুনখোলা গ্রামে ১৫ শতকে নির্মিত এই মসজিদটি অবস্থিত। মসজিদটির স্থাপত্যশৈলী খান জাহান আলী নির্মিত অন্যান্য স্থাপত্যশৈলী থেকে ভিন্ন। ৭.৭ বর্গমিটার চৌকোণা দালানের দেয়ালগুলো ২.২৪ মিটার করে পুরু। মসজিদটির পূর্বদিকে ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে একটি করে প্রবেশদ্বার রয়েছে। এতে তিনটি মিহরাব রয়েছে যার মধ্যে কেন্দ্রীয় মিহরাবটি সবচেয়ে বড়। মসজিদে একটি অর্ধগম্বুজ আছে। ইটের দেয়ালসমূহ নষ্ট হয়ে যাওয়ার পরে ১৯৮০ সালে ইউনেস্কোর সহায়তায় সংস্কার করা হয়।
জনশ্রুতি আছে, হযরত খানজাহান (রহ:) এর বসতভিটার পশ্চিমে যে প্রহরা চৌকি ছিল তাকে কেন্দ্র করে এ মসজিদটি নির্মাণ করা হয়। এক গম্বুজ বিশিষ্ট র্বগাকৃতির মসজিদটির বাইরের দিক লম্বায় প্রায় ৪০ ফুট এবং ভেতরের দিক ২৫ ফুট। সুলতানী আমলের খানজাহানীয় কীর্তিটির এ মসজিদের তিন দিকে মোট ৫টি দরজা রয়েছে। পূর্বদিকে ১টি বড় (প্রধান) দরজাসহ মোট ৩টি এবং উত্তর ও দক্ষিণ দিকে ১টি করে মোট ২টি দরজা রয়েছে। পূর্বদিকের বড় দরজাটির উচ্চতা ৯ফিট, প্রস্থ ৪ফিট ৪ইঞ্চি এবং ছোট ২টি দরজার উচ্চতা ৭ফিট এবং প্রস্থ ৩ফিট। উত্তর-দক্ষিণ দিকের দরজা ২ টির উচ্চতা ৯ফিটের বেশি এবং প্রস্থ ৫ফিট করে। Chunakhola-Mosque,-Bagerhat(2)মসজিদের মধ্যে ১টি কেন্দ্রিয় মেহরাব ও ২টি ছোট মেহরাব রয়েছে। বড়টির উচ্চতা ৭ফিট ও প্রস্থ ৪ফিট। ছোট মেহরাব ২টির উচ্চতা ৪ফিট প্রায় এবং প্রস্থ ৩ফিট। মেহেরাব গুলোর প্রত্যোকটিতে কারুকার্য্য খচিত পোড়া মটির (Terra Cotta) অলঙ্করণ রয়েছে। অলঙ্করণের ক্ষেত্রে জালির কাজ, ফুল ও লতাপাতার ডিজাইন, যুক্ত বৃত্ত, বিষমকোণী চর্তুভুজ এবং প্রচলিত ঝুলন্ত মোটিফ স্থান পেয়েছে । বর্তমানে এ অলঙ্করণগুলি শুধু মিহরাবের কুলুঙ্গিতে, খিলানের উপরে এবং বাঁকানো র্কানিশে লক্ষ করা যায়। বর্গাকার এ মসজিদের উত্তর-দক্ষিণ ও পূর্ব-পশ্চিমভাবে ভেতরের দৈর্ঘ্য ৩ ইঞ্চি এবং ব্যাসার্ধ নিচে ৮০ ফিট। ৪টি খিলানের উপর এক গম্বুজ বিশিষ্ট এ প্রত্নস্থাপত্যটির ছাদ থেকে মাটি পর্যন্ত উচ্চতা ২২ ফিট ৭ ইঞ্চি। ছাদ থেকে ১২ ফিট উচ্চতার গম্বুজটির ব্যাসার্ধ ৯১ ফিট। ভূমি থেকে (মাটি) গম্বুজের উপর পর্যন্ত চুনাখোলা মসজিদের মোট উচ্চতা ৩৪ ফিট ৭ ইঞ্চি। Chunakhola Mosque, Bagerhat. Chunakhola Mosque, Bagerhat. মসজিদের দেওয়ারের পুরুত্ব ৭ফুট ৮ইঞ্চি এবং বাইরের চার কোণের চারটি খান জাহানী রীতি অনুযায়ী গোলাকার ইটের খাম্বা বা পিলার রয়েছে। চুনাখোল মসজিদে এখনও নিয়মিত নামাজ আদায় করা হয়।
Instruction
ঢাকার সায়দাবাদ থেকে প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে ১০টা পর্যন্ত এবং সন্ধা ৭ টা থেকে রাত ১০ টা পর্যন্ত অনেকগুলা গাড়ী ছেড়ে যায় – মেঘনা , বনফূল, পর্যটক , ফাল্গুনী, আরা, বলেশ্বর, হামিম ও দোলা। এছাড়া গাবতলী থেকে সোহাগ , শাকুরা , হানিফ ও ইগল পরিবহন ছেড়ে যায়। ভাড়া ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা। যাতায়াতে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘন্টা।
আন্তঃনগর ট্রেন সুন্দরবন এক্সপ্রেসে খুলনা গিয়ে এরপর বাস ধরে বাগেরহাটে যেতে পারেন। রূপসা থেকে বাগেরহাটে যেতে প্রায় ৪০ মিনিট লাগে। বাসস্ট্যান্ড থেকে ষাট গম্বুজ মসজিদ সাত কিলোমিটার এবং খানজাহান আলীর (রহ.) সমাধিসৌধ থেকে ৩ কিলোমিটার দূরে পশ্চিমে ষাট গম্বুজ মসজিদ চত্বর। রিকশাভাড়া ৩০ টাকা। ষাটগম্বুজ মসজিদের উত্তর-পশ্চিম দিকেরে পথ ধরে ঘোড়া দিঘির পাস দিয়ে সোজা পশ্চিমের পথে যেতে হাতের বামে চোখে পড়বে বিবি বেগনী মসজিদ। আরেকটু ভিতরে গেলে চুনাখোলা মসজিদ দেখতে পাওয়া যায়।