নিরিবিলি পিকনিক স্পট

নিরিবিলি পিকনিক স্পট

Khulna Narail

0 Reviews

কৃত্রিম ভাবে গড়ে ওঠা নড়াইলের রামপুরা এমাকার নিরিবিলি পিকনিক স্পট ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে এই এলাকায়। যান্ত্রিক জীবনের একঘেয়েমি দূর করা ও ছায়া শীতল পরিবেশে কয়েকটা দিন নিজেকে বিলিয়ে দিতে এক অন্যতম পর্যটন স্পট নিরিবিলি পিকনিক স্পট। শহর থেকে মাত্র ১৪ কিলোমিটার দূরে এই পিকনিক স্পটটি যাত্রা শুরু হয় ১৯৯১ সালে।


সবুজ গাছপালায় ঘেরা হাজারো পাখির কলকাকলি, আকর্ষণীয় ফুলের বাগান, মিনি চিড়িয়াখানা, দৃষ্টিনন্দন পুকুর, বাহারি ফুয়ারা, আর গ্রাম বাংলার বিলুপ্ত প্রায় লোকজ ঐতিহ্যের সমারোহে গড়ে উঠা নড়াইলের নিরিবিলি পিকনিক স্পট। আম, কাঁঠাল, নারিকেল, সুপারী, লেবু, মেহগুনি, রবার, পান্থমাধব, ক্রিস্টমাস ট্রি আর ঝাউ গাছে সমৃদ্ধ ওইপেন গাছের বেড়ায় ঘেরা ফুলের বাগানগুলোতে গোলাপ ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, কসমস, লিলি, গ্লোবল, রজনীগন্ধা, সুর্য্যমুখি ফুলের সমারোহে মনোরম এক পরিবেশ সৃষ্টি করেছে।


দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আগত বিনোদন প্রিয় মানুষের কলকন্ঠে এ পিকনিট স্পট সবসময় মুখরিত থাকে। সারা বছর নিরিবিলি পিকনিক স্পটে বিনোদন প্রিয় মানুষের কমবেশি আনাগোনা থাকলেও শীত মৌসুমে পর্যাটকদের সংখ্যা বেড়ে যায়। প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন্ডিত এ পিকনিক স্পটে প্রতিদিন দুর দুরান্ত থেকে শতাধিক বাস, মিনিবাস, কার, মাইক্রোবাস, মোটরসাইকেল, ট্যাম্পু, ভ্যান ও বাইসাইকেলে চড়ে অসংখ্য নারী পুরুষ ও শিশু আসছে। এ যেন বিভিন্ন বয়সের মানুষের এক মিলনস্থল।  

আজ থেকে আনুমানিক ২৫০ বছর আগে এলাকাটি বনজঙ্গলে ঘেরা ছিল। সে সময় বিভিন্ন প্রজাতির গাছপালা আর বিচিত্র বন্য প্রাণীর বিচরণে নিরিবিলিতে প্রকৃতির এক বিশাল রাজ্য ছিল। হঠাৎ একদিন এখানে আবির্ভাব হন আধ্যাত্নিক সাধক পুরুষ শাহ্ পজু দেওয়ান। এ সময়ে বিভিন্ন অলৌকিক ঘটনার খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। দূর দুরান্ত থেকে অসংখ্যা মানুষ এই কামেল পুরুষের বাইয়াত গ্রহণের জন্য আসে। নিরিবিলি পিকনিক স্পটে প্রথম প্রবেশ পথের পাশে পজু শাহের মাজার অবস্থিত। এখানে তিনি একান্ত নিরিবিলিতে ঘুমিয়ে আছেন। কোনদিন তিনি আর জাগবেন না। নিরিবিলিতে আগন্তক দর্শানার্থী পথিকদের তিনি যেন ডেকে বলেন- দাঁড়াও বন্ধু এখানে বহুদিন আগে আমার এমন স্বপ্ন ছিল। আমারই সেই স্বপ্ন! আমারই নিরিবিলির পিকনিক স্পট !



নিরিবিলি পিকনিক স্পটে যা কিছু আছে :


মিনি চিড়িয়াখানা :

প্রশাসনিক ভবনের পেছনে ও পুকুরের পূর্বপাড়ে রয়েছে পৃথক দুটি মিনি চিড়িয়াখানা। এই চিড়িয়াখানায় রয়েছে রয়েল বেঙ্গল টাইগার, কুমির, কয়েক প্রজাতির হরিণ,ঘোড়া, বানর, হনুমান, ময়ুর, মদনটাক পাখি, মনিরা,বুজরিকা, খরগোস, পেলিকান, গিনিপিকসহ নানা ধরণের পশুপাখি।

চিড়িয়াখানায় এ সমস্ত পশুপক্ষি প্রদর্শনের জন্য রয়েছে মনোরম ঘর ও খাঁচা। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তার কথা ভেবে করা হয়েছে মজবুত নিরাপত্তা বেষ্টনি। চিড়িয়াখানাটি আরও সম্প্রসারণের জন্য মালিক পক্ষের পরিকল্পনা রয়েছে।  

 

তিমি মাছের কঙ্কাল :

জাদুঘরের অন্যতম আকর্ষণ তিমি মাছের কঙ্গাল। ৯৬ সালের মাঝামাঝি এটিকে সংগ্রহ করা হয় বাগেরহাটের উপকুল অঞ্চল থেকে। তিমিটি প্রলঙ্কারী ঝড়ের ধাক্কায় গভীর সমুদ্র থেকে আছড়ে পড়ে বঙ্গোপসাগরের উপকুলে। অর্ধশত জেলে মাসাধিকাল পরিশ্রম করে মাছটির মাংশ ছড়িয়ে হাড়গুলোকে আলাদা করে। বহু চেষ্টা তদ্বির  করে তাদের নিকট থেকে প্রচুর অর্থের বিনিময়ে কঙ্গালটি নিরিবিলির জন্য সংগ্রহ করা হয়েছে। জাতীয় যাদুঘর ছাড়া বাংলাদেশের তিমির এতবড় কঙ্গাল আর কোথাও নেই।  


এস. এম. সুলতান আর্ট গ্যালারী :

বিশ্ববরেন্য চিত্রশিল্পী এস. এম সুলতানের চিত্র কর্মসহ বিভিন্ন শিল্পীর অঙ্কিত ছবি স্থান পেয়েছে গ্যালারীতে। চিত্র শিল্পী এস. এম সুলতানের নামানুসারে এই গ্যালারীটির নামকরণ করা হয়েছে। সুলতানের আঁকা অনেকগুলো পেশীবহুল ছবি রয়েছে এখানে। প্রশাসনিক ভবনের দোতলায় বাম পার্শে অবস্থিত এ গ্যালারীটি পিকনিক স্পটের সৈন্দর্যকে বৃদ্ধি করেছে বহুলাংশে। দর্শনার্থীরা দোতলায় উঠে থমকে যায় এম মনোরম ছবি আর ডেকোরেশন দেখে। পুরানো আমলের ভিক্টোরিয়ান ধাচে তৈরী এ ভবনটির দেতলায় রয়েছে প্রসস্ত বারান্দা। বারান্দার দেয়লে রয়েছে কতগুলো মনোরম আলোকচিত্র। বাঁধাই করা এ আলোকচিত্র গুলো চোখ ধাঁধাবে দর্শনাথীর।  


রোপওয়ে :

এই স্পটের পূর্বদিককার পুকুরের উপর দিয়ে  রয়েছে ঝুলন্ত দড়ির রাস্তা। দেশে এ ধরণের বিনোদন উপযোগী রোপওয়ে এটি ছাড়া আর নেই। বৃহত্তর সিলেটের ছাতকে এ ধরণের রেপওয়ে থাকলেও তা কেবল পাথর বহনেরজন্য ব্যবহৃত হয়। নিরিবিলিতে থাকা রেপওয়েতে দুইজন মানুষ খানিক সময়ের জন্য চড়তে পারবেন। যাতে উঠে কিছুক্ষণের জন্য হলেও পর্বত আহরনের মত আনন্দ পাবেন।  

 

বুক স্টল :

নিরিবিলি পিকনিক স্পটের মাঝে রয়েছে একটি সৃজনশীল বইয়ের স্টল। প্রিয়জনকে উপহার দেয়ার মত বহু ধরণের বই। প্রবন্ধ, উপন্যাস, গল্প, কবিতা, ভ্রমণ কাহিনী, ছোটদের বই, অ্যাডভেঞ্চার সহ বহুধরনের বইরয়েছে এ স্টলে। বিশেষ কমিশনে স্টল থেকে বই সংগ্রহ করার সুবিধা রয়েছে। বুক স্টলে অন্য একটি বাড়তি আকর্ষণ হচ্ছে বিভিন্ন সময়ে এ স্টলে দেশের খ্যাতনামা লেখক সাহিত্যিকরা এসে বসেন। তাঁদের অটোগ্রাফসহ বই সংগ্রহের সুযোগ রয়েছে।  


পুকুর :

নিরিবিলি পিকনিক স্পটের একটি বিশেষ দর্শনীয় বিষয় হচ্ছে এখানকার দুটি পুকুর। দুটি পুকুরের একটি স্পটে ঢুকলেই দর্শকের চোখে পড়বে। এ পুকুরের বিশেষকয়েকটি আকর্ষণ রয়েছে। এর মধ্যে শানবাধা ঘাট, ঝুলন্ত ব্রীজ, ডলফিন, ফোয়ারা আর শাম্পান নৌকা।চমৎকার শানবাধা ঘাটটিতে রয়েছে বসার মত দুটি বড় ঠেস বেঞ্চি আর উপরে ছাউনি। এই বেঞ্চিতে বসে পুকুরের দিকে তাকালে চোখে পড়বে পুকুরের চার কোনায় চারটি ডলফিন ফোয়ারা। চোখ যাবে পুকুরের ঝুলন্ত ব্রীজের দিকে। কাঠের তৈরী এ ব্রীজে উঠে পুকুরের এ পাড় থেকে ও পাড়ে যাওয়া যায়। ব্রীজের মঝে রয়েছে একটা বিশেষ ধরণের ছাউনি। খড়ের তৈরী পাহাড়ি টিলায় সীমান্ত চৌকির মত নির্মিত এ ছাউনির নিচে ব্রিজের রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছা হবে অনেকক্ষণ। সেতু থেকে হয়তো হঠাৎ চোখ পড়বে পুকুরের ভাসমান নৌকাটির দিকে। নামমাত্র ভাড়ায় কিছুক্ষণের জন্য এ নৌকায় চড়া যায়। নৌকা নিজ হাতে চালাবার জন্য ব্যবস্থা আছে। আছে বৈঠা আর হাল। সঙ্গের বন্ধুকে হাল ধরতে বলে আপনি বৈঠা চালাবেন।   

স্টাচু :

নিরিবিলি পিকনিক স্পটের ভেতরে স্থানীয় শিল্পীদের নির্মিত কয়েকটি স্টাচু রয়েছে। এর মধ্যে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরম্নল ইসলাম, এস. এম সুলতানের প্রতিমূর্তি ও ঐতিহাসিক নর্তকী আলেয়ার প্রতিমূর্তি বড়ই মনোরম। কাজী ইমরানের তৈরী এই স্টাচুগুলি স্পটের সৈন্দর্যকে বৃ্‌দ্ধি করেছে বহুলাংশে। স্পটে কাজী ইমরানের তৈরী অন্য কর্মটি হচ্ছে আলেয়ার প্রতিকৃতি। ফোয়ারার পানিতে সিক্ত  স্বচ্ছবাসনা নৃত্যপটিয়সী আলেয়ার মুক্তমনের দর্শনার্থিদের একটা বিশেষ আকর্ষণ হয়ে দেখা দেয়। সমপ্রতি নির্মিত বেদে বৌর সাপের ডালা মাথায় নৃত্যরত ভঙ্গির প্রতিকৃতিটি চমৎকার লাগে।  

 

ফোয়ারা :

নিরিবিলির আকর্ষণগুলোর অন্যতম বিভিন্ন স্থানে স্থাপিত কয়েকটি জল ফোয়ারা। বিশেষভাবে নির্মিত এ ফোয়ারাগুলো চমৎকার দেখায়। এর মধ্যে শাপলাকৃতি ফোয়ারা, বৃত্তাকার ফোয়ারা, ডলফিন ফোয়ারা, হংশ ফোয়ারা উল্লেখযোগ্য। মতিঝিল শাপলা চত্বরের অনুকরণে নির্মিত শাপলাকৃতির দুটি ফোয়ারা রয়েছে স্পটের পূর্ব উত্তর কোণার ফুলের বাগানটিতে। চারপাশের দেশী বিদেশী জাতের বাগানে ফোটা ফুলের মাঝে ফুটে আছে দুটো জলে ফোটা ফুল শাপলা। ফুল দুটে বাগানের অন্যসব ফুলের সাথে একাকার হয়ে গেছে। স্পটের প্রশাসনিক ভবনের সম্মুখে হংশ ফোয়ারাটি এক বিশেষ শিল্পকর্মের নিদর্শন। দুটো রাজহংশ সারাক্ষণ পানিতে পা ভিজিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মুখোমুখি।  

গাছের প্রতিকৃতি :

এই স্পটের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে কামিনি গাছে তৈরী বিভিন্ন প্রকার প্রানী ও বস্তুর চমৎকার সব প্রতিকৃতি। এর মধ্যে রয়েছে হাতি, ঘোড়া, ময়ুর, বাঘ, সিংহ, এ্যারে প্লেন পন্ডিত মহাশয়ের টেবিল সহ নানাবিধ আকর্ষণীয় সব আইটেম। জীবন্ত গাছ পালা দিয়ে বিশেষ কায়দায় তৈরী এসব প্রতিকৃতি দারুণ দেখায়।পন্ডিত মশায়ের চশমা পরা চোখে লাঠি হাতে ছাত্রকে শাসন করার দৃশ্য দর্শনার্থীদের অবাক করে দেয়। গোমড়া মুখি মানুষও পন্ডিত মশায়ের টেবিলের সামনে গিয়ে হেসে ফেলেন।  


শিশুদের বিনোদন :

শিশুদের বিনোদনের জন্য এই স্পটে রয়েছে কয়েকটি আয়োজন। এর মধ্যে চরকা, দোলনা ও টার্নিং কার উল্লেখযোগ্য। স্পটের উত্তর পার্শ্বে শিশুদের বিনোদনের জন্য নির্মিত চরকায় আপনার শিশু চড়তে পারে কিছুক্ষণের জন্য। শিশুকে চরকার চেয়ারে বসিয়ে আপনি দাঁড়িয়ে থাকবেন চত্তরের বাইরে। কয়েক পাক পরে দেখবেন আপনার শিশুর বুক ভরে গেছে হাসি আর খুশিতে। শিশু ও কিশোরদের বিনোদনের জন্য রয়েছে একটি দোলনা। দোলনায় দুলে মানব শিশু বড় হতো এক সময়। সময়ের বিবর্তনে এই দোলনা হারিয়ে গেছে। এখন তা শুধু হয়ে আছে গল্পের মতো। শিশুকে এই দোলনায় চড়িয়ে বেড়িয়ে আসতে পারেন সেই গল্পের দেশে।


শিশুর মন রোবপোপ আর রবিন হুডের দুর্দন্ত সাহসি। কিন্তু দেহ আর কাঠামো খুবই কোমল। কোমলমতি শিশুর খানিক দুর্দান্ততা প্রকাশ পেতে পারে স্পটের টার্নিং কার চালনার মাধ্যমে। একটি সুন্দর গেলাকার রাস্তায় ব্যটারী চালিত গাড়ি চালাবার সুযোগ রয়েছে শিশুদের। নামমাত্র ভাড়ায় গাড়িটি ড্রাইভ করা যায়। এই টার্নিং রাস্তার বৃত্তাকার জায়গায় রয়েছে নানা জাতের দেশী বিদেশী গোলাপ।  


 

সংরক্ষিত ফুলের বাগান :

নিরিবিলি পিকনিক স্পটের উত্তরপূর্ব কর্ণারে রয়েছে একটি সংরক্ষিত ফুলের বাগান। ওইপেং গাছের বেড়া দ্বারা বেষ্টিত এ বাগানটিতে রয়েছে নানা জাতের দেশী বিদেশী ফুলের গাছ।


এর মধ্যে গোলাপ, ডালিয়া, চন্দ্রমল্লিকা, গ্লোবল, লিলি, রজনীগন্ধা, কসমস, সূর্যমূখি এবং গাঁদা ফুল গাছ উল্লেখযোগ্য। এই ফুলের বাগানটিতে ফুলের গাছ ছাড়াও রয়েছে পার্থপাদক, রবার গাছসহ অনেক রকমের ফলজ ও কাঠের বৃক্ষ। এখানে দুটি শাপলা ফোয়ারা ও আলেয়ার প্রতিকৃতি রয়েছে।  

 

পেয়ারা বাগান :

স্পটের পাশে রয়েছে বিশাল পেয়ারা বাগান। এ বাগানে আছে অনেকগুলো বিশ্রাম বেঞ্চি। বাগানটি বড়ই চমকৎকার লাগে। চা বাগানের ছায়া বৃক্ষের মত সারাদিন ছায়া দিয়ে যায় দর্শনার্থীদের। এখানে বসে প্রিয়জনের সাথে একান্ত নিরিবিলি গল্প করা যায়।

নিরিবিলি নামের পূর্ণ সার্থকতা খুঁজে পাওয়া যায় এই পেয়ারা বাগানে বসে। বাগানে যদি বসন্ত থাকে তাহলে কোকিলও ডাকে। কোকিলের ডাক শুনে মন জুড়িয়ে যাবে।  


   

ইমদাদুল হক মিলন মঞ্চ :

স্পটের বিভিন্ন প্রকার সামাজিক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদি সম্পন্ন করার জন্য রয়েছে একটি মঞ্চ। এ মঞ্চটির নামকরণ করা হয়েছে প্রখ্যাত উপন্যাসিক ও টিভি নাট্যকার ইমদাদুল হক মিলনের নামানুসারে। ১৯৯৮ সালের ফেব্রুয়ারীতে ইমদাদুল হক মিলন নিরিবিলি পিকনিক স্পটে তাঁকে দেওয়া এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগদেন। এ সময় স্পটের স্বত্বাধিকারী ইমদাদুল হক মিলনের সম্মানে যে মঞ্চটিতে তিনি বক্তটিতে রেখেছিলেন সেখানে ‘ইমদাদুল হক মিলন মঞ্চ’ নামে একটি স্থায়ী মঞ্চ করার ঘোষণা দেন। অতপর পরর্তীতে সেখানে মঞ্চ নির্মাণ করা হয়।

মঞ্চটির উপরিভাগ সবুজ ঘাষে ঢাকা। যা দেখতে মনোরমই লাগে। এখানে সামাজিক সাংস্কৃতিকঅনুষ্ঠানের পাশাপাশি পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠানাদি যেমন বিবাহ, জন্মদিন বৌভাতসহ সকল প্রকার অনুষ্ঠান করা যায়। 



গাছপালা :

নির্দিষ্ট ফলের বাগান ছাড়াও এই চত্তরে রয়েছে বহু জাতের দেশী বিদেশী কাঠ ও ফলজ বৃক্ষের গাছ - আম, কাঠাল, লিচু, বেল, নারকেল, সুপারী, জাম্বুরা। মেহগনি, ইপিল, রাবার, পান্থপাদপ, ঝাউগাছ, ওইপেং, ক্রিসমাসট্রিসহ বহু বিধ গাছপালা। এ সমস্ত গাছের ডালে রয়েছে হাজাও প্রজাতির পাখি। পূর্বপাশে পুকুর পাড়ে সারিবদ্ধ নারিকেল গাছের নিচে রয়েছে বিশেষ ধরনের ঘাষ। এমন ঘাসের বিছানায় বসে থাকতে ইচ্ছা হবে অনেক্ষণ। মোট কথা বহু রকম গাছ পালা ঘাসবনে ঢাকা নিরিবিলি বিনোদনের এক শ্রেষ্ঠ প্রান্তর।  

 


দর্শনার্থীদের সুবিধার বিষয়সমুহ

রেস্ট হাউজ :

প্রায় প্রত্যেক পর্যাটন এলাকাতেই যে সমস্যাটি প্রকট তা হলো আবাসিক সমস্যা। দুরে গিয়ে একটু বিশ্রাম, কিংবা রাত্রী যাপনের ব্যবস্থা নেই অধিকাংশ দর্শনীয় স্থানে।এমনকি মুজিব নগর, সাঁগর দাড়ী, সিলাইদহ, কুয়াকাটাতেও এ সমস্যা রয়েছে। তাই নিরিবিলি কর্তৃপক্ষ সর্বপ্রথম যে বিষয়ের উপর গুরুত্ব দিয়েছেন তা হচ্ছে আবাসিক ব্যবস্থা। এখানে এলে যে কেউ নামমাত্র ভাড়ায় রত্রিযাপন করতে পারেন অনায়াসে। আবাসিক প্রত্যেক রুমে যেসব সুবিধাদি রয়েছে তা হচ্ছে প্রসস্ত বেলকুনি, বিশেষ ধরণের খোলামেলা জানালা।


প্রত্যেকটি বিশাল আকার রুমে এটাস্ট বাথ, খাটে বিছানো পরিচ্ছন্ন বেড ও বয় সার্ভিস। তাছাড়া ভি. আই. পি রুমে সোফা, টি টেবিলসহ ড্রানিং স্পেস ও ডেসিং প্লেস। সবমিলে একা কিংবা স্বপরিবারে থাকার মত এক অনন্য আবাসিক ব্যবস্থা।  

 

কুঠির শিল্প সামগ্রী :

স্টালের ভেতরে কুঠির শিল্প সামগ্রীর একাধিক স্টল রয়েছে। এই সমস্ত স্টলে কঠের তৈরী তৈজসপত্র পাওয়া যায়। এরমধ্যে ফুলদানী, লাইট স্টান্ড, খেলনা সামগ্রীসহ অনেক ধরণের জিনিষ রয়েছে। যার অধিকাংশই তৈরী করা হয়েছে নিজেস্ব কারখানায় উন্নতমানের কাঠ ও অন্যান্য উপকরণ সহযোগে। এগুলো লক্ষীপাশার গন্ডি পেরিয়ে স্থান করে নিয়েছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে। ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামের অভিজাত বিপনী কেন্দ্রগুলোতে। তুলনামুলকভাবে কম মূল্যে নিরিবিলির স্পগুলো থেকে এগুলো আগত দর্শনার্থীদের জন্য বিশেষ কমিশনে বিক্রীর ব্যবস্থা রয়েছে।


এখানে অন্যান্য হস্তশিল্পজাত দ্রব্য ও কসমেটিকস্ সামগ্রী পাওয়া যায়। অত্যন্ত ন্যায্যমূল্যে এসমস্ত দ্রব্যদি বিক্রয় করা হয়। যার একটি দ্রব্য নিরিবিলিতে আপনার ভ্রমণ স্মৃতি ধরে রাখবে বহুদিন।  

 

নামাজের ঘর :

আগত দর্শনার্থীদের নামাজ আদায় করার জন্য নিরিবিলি পিকনিক স্পটে একটি নামাজের ঘর। এখানে ধর্মপ্রান মুসলমানেরা নির্ঝঞ্জাট পরিবেশে নামাজ পড়ে নিতে পারবেন। পাশেই ওজু করে নেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত পানির ব্যবস্থা আছে।


প্রত্যেক নামাজের সময় স্পটের মাইক ব্যবহার কিংবা উচ্চ শব্দ করা বন্ধ রাখা হয়। যাতে করে মুসল্লিরা নামাজ পড়তে সাচ্ছন্দ বোধ করেন।  


খাবার পানি :

আগত পিকনিক পার্টি যাতে বিশুদ্ধ খাবার পানি সংকটে না পড়েন সে লক্ষ্যে স্পটে অনেকগুলো গভীর ও অগভীর নলকুপ বসানো আছে। এ নলকুপের পানি খাবার উপযোগী কিনা তা জনসাস্থ্য প্রকৌশলের কর্মী দ্বারা প্রায়ই পরীক্ষা করা হয়ে থাকে। দেশের অধিকাংশ অঞ্চলের নলকুপের পানিতে আর্সেনিক নামক বিষ মিশ্রিত থাকার বিষয়টি লক্ষ্য রেখে কর্তৃপক্ষ সম্মানিত দর্শনার্থীদের আর্সেনিক মুক্ত বিশুদ্ধ খাবার পানি পাবার ব্যাপারে যাবতীয় ব্যবস্থা নিতে আন্তরিক।  

 

রান্নার চুলা :

একসঙ্গে অনেকগুলো পার্টি যাতে অনায়াসে পিকনিক চালিয়ে যেতে পারে সেজন্য স্পটের বিভিন্ন স্থানে রয়েছে পঞ্চাশটির অধিক রেডিমেট চূলা। অনেক পিকনিক কর্নারে গিয়ে পার্টিকে চূলা তৈরী করার মত এক মহা ঝামেলা পোহাতে হয়। এ ঝামেলা থেকে এড়বার জন্যই নিরিবিলি কর্তৃপক্ষ ব্যতিক্রম ধর্মী এমন ব্যবস্থা নিয়েছেন।


বিশ্রাম বেঞ্চি :

নিরিবিলি পিকনিক স্পটের এ বিশাল চত্তর ঘুরে দর্শনার্থীদের ক্লান্ত হতেই হবে। তখন প্রয়োজন বিশ্রামের। আর তাই বিশ্রামের জন্য রয়েছে অর্ধ শতাধিক বিশ্রাম বেঞ্চি। বিশেষ ভাবে নির্মিত এ বেঞ্চির সামনে রয়েছে টি টেবিল আর উপরে ছাউনি। টালি কিংবা খড়ের তৈরী এ সমস্ত ছাউনির ঘর দেখতে খুবই মনোরম। বেঞ্চিতে বসে একান্ত নিরিবিলি বন্ধুর সঙ্গে গল্প করা যায় বহুক্ষণ। পাশেই ফার্স্টফুডের দোকান। ইসারা করলেই এসে পড়বে বিভিন্ন প্রকার ড্রাইফুড আর ঠান্ডা পানীয়। এ সমস্ত বিশ্রাম বেঞ্চির চারিপাশে মন মাতানো ফুলের গন্ধ এবং পাখীর ডাক।  


পর্কিং :

দর্শনার্থীদের গাড়ি পার্কিং এর জন্য রয়েছে বিশেষ সুবিধা। খুলনা লক্ষীপাশা রুটের দুই পাশে প্রশস্ত জায়গায় বড় বাস, ট্রাক, পিকআপ জাতীয় গাড়ি পার্কিং করা যায়। মাইক্রেবাস, জীপ, প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য ছোট যানবাহনগুলো পার্কিং-এর জন্য স্পটের ১নং গেটের পাশেই রয়েছে একটি পার্কিং প্লেস।


এখানে গাড়ি রেখে আপনি ভাবনাহীন ঘুড়ে বেড়াতে পারবেন পিকনিক স্পট।


Instruction

কিভাবে যাবেন


ঢাকার কল্যাণপুর গাবতলী ও মহাখালী হতে নড়াইল জেলায় সরাসরি এর ব্যবস্থা রয়েছে এসি ১০০০ টাকা ননএসি ৫০০ টাকা।


বাস

একে ট্রাভেলস কল্যাণপুর মোবাইল-01709964207, নড়াইল মোবাইল-01709964202


হানিফ এন্টারপ্রাইজ কল্যানপুর মোবাইল-01713049573


অনলাইনে টিকিট বুকিং এর জন্য, সহজ-16374

বাস বিডি-16460


ট্রেন


ঢাকা থেকে নড়াইল সরাসরি কোন ট্রেন নেই তবে ঢাকা থেকে যশোর জেলায় ট্রেনে যেয়ে সেখান থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে বাস বা সিএনজি যোগে নড়াইল জেলায় যেতে পারেন।

সকল ট্রেনের ভাড়া ৪৭৫ টাকা


নড়াইল সদর থেকে লক্ষীপাশা বাসষ্ট্যান্ড যেতে লক্ষীপাশার কাছাকাছি হাতের বাম সাইডে নিরিবিলি পিকনিক স্পট অবস্থিত ।


ঢাকা কমলাপুর থেকে যশোর


বেনাপোল এক্সপ্রেস 12: 40 Am পৌঁছায় 07:50 Am

বন্ধ বৃহস্পতিবার

সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাঁড়ে 6:20 Am পৌঁছায় 2:20 pm

বন্ধ বুধবার

চিত্রা ছাঁড়ে 7:00 pm পৌঁছায় 3:40 Am

বন্ধ সোমবার


যশোর থেকে ঢাকা কমলাপুর


চিত্রা ছাঁড়ে 9 Am পৌঁছাই 06:20 Am

বেনাপোল এক্সপ্রেস ছাঁড়ে 02:07 pm মিনিটে পৌঁছায় 08:55 pm

সুন্দরবন এক্সপ্রেস ছাঁড়ে 9:30 Pm পৌঁছায় সকাল 5:40 Am

Travel Cost