প্রেমকানন
খুলনার ঐতিহ্যবাহী প্রেমকানন এক সময় ছিল প্রেমিক-প্রেমিকাদের তীর্থস্থান। সবুজ ঘাসের চত্বরে গেট দিয়ে ঢুকতেই ছিল গাছ দিয়ে বানানো বিশাল হাতি। বাঁ পাশে চেয়ার-টেবিলে ব্যস্ত গাছ দিয়ে বানানো শিক্ষক-শিক্ষার্থী। পেছনে বাঁধানো পুকুরঘাট ও নেট দিয়ে ঘেরা ‘পরীর ঘর’। কথিত আছে গভীর রাতে এখানে জিন-পরীর আনাগোনা দেখা যেত। বাগানের ডান পাশে মাটির রাস্তা- যেখানে নানা রকমের ফুলের সমারোহ। বিকাল হলেই তরণ-তরুণীরা ভিড় করত এখানে। এ সবই খুলনার প্রেমকাননের অতীত ইতিহাস। সময়ের ব্যবধানে গাছের তৈরি সেই হাতি, ময়ূর, ঘোড়া, পরীর ঘর ধংস হয়ে গেছে। নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ফুল বাগানটিও নষ্ট হয়েছে। বাগানের ভিতরে বড় ঘাস আর জংলা।
খুলনা মহানগরীর জোড়াগেট থেকে বাঁ দিকের সরু রাস্তা ধরে একটু এগোলেই বিশাল প্রাচীরঘেরা প্রেমকানন। সরু রাস্তাটার নাম প্রেমকানন রোড। জানা যায়, স্থানীয় মাড়োয়ারি জমিদার মঙ্গল চাঁদ চুনিলাল ছিলেন কৃষ্ণভক্ত। শ্রীকৃষ্ণ-রাধার প্রতি ভক্তি-শ্রদ্ধায় গড়ে তোলেন ‘প্রেমকানন’ নামের এই উদ্যান। বাংলা ১৩৩৫ সালে প্রায় সাড়ে চার বিঘা জমির ওপর এই উদ্যানটি বানিয়েছিলেন তিনি। সে সময় বাহারি ফুলের বাগান, সবুজ ঘাসের গালিচা বিছানো মাটির রাস্তা, স্বচ্ছ পানির পুকুর, গাছের তৈরি পশু-পাখি, বসার জায়গা, পরীর ঘর দৃষ্টি কাড়ে বিনোদনপ্রেমী মানুষের। প্রেমকাননের প্রধান ফটকে বাংলা ও হিন্দিতে লেখা রয়েছে ‘প্রেমকানন’। স্থানীয় স্কুল শিক্ষক শাহজালাল হোসেন জানান, সে সময় প্রেমকাননকে ঘিরে জমজমাট অবস্থা ছিল। এটি ছিল সে সময় প্রেমিক-প্রেমিকাদের তীর্থস্থান। ফুল বাগান আর পুকুরের পাশে বসে তারা সময় কাটাতো। সিনেমার শুটিং পর্যন্ত হয়েছে এখানে। ফাল্গুন মাসের দোলযাত্রার দিন প্রেমকানন সাজানো হতো পরিপাটি করে। উৎসব চলতো সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত। কিন্তু বর্তমানে দখল-বেদখলে ধংস হয়ে গেছে প্রেমকানন। এলাকাবাসী জানায়, প্রেমকাননে এখন আর কেউ ঘুরতে আসেন না। বাগানের দেখাশোনার ভার সত্যনারায়ণ মন্দিরের আওতায় যাওয়ার পর সংস্কারের নামে সারাক্ষণই বন্ধ থাকে এর গেট। ফলে বাইরে থেকে কেউ এলেও ভিতরে ঢুকতে পারেন না। ফুলবাগান, গাছের তৈরি হাতি, ময়ূর, পরীর ঘর সবই নষ্ট হয়ে গেছে। স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, এক সময় প্রেমিক-প্রেমিকারা এখানে আসলে তাদের লাঞ্ছিত করে মোবাইল, টাকা ছিনতাই করত একটি চক্র। সে কারণে ভয়ে কেউ আসতে চান না। বর্তমানে রথযাত্রা উপলক্ষে এখানে একদিনের অনুষ্ঠান হয়। করোনার কারণে এ বছর তাও হয়নি। প্রেমকাননের পুকুরটি দখল করে তাতে মাছ চাষ করছে প্রভাবশালীরা। সত্যনারায়ণ মন্দিরের সভাপতি গোপী কিষান মুন্ধ্রা জানান, এখানকার মাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় ফুলের গাছ ও বাগান নষ্ট হয়েছে। নতুন করে মাটি ফেলে বাগানটি উঁচু করা হচ্ছে। এলাকার কিছু লোক পুকুরে গোসল করে, পরিবেশ নষ্ট করে- এ কারণে গেট বন্ধ করে রাখা হয়েছে। তবে বাগানের ঐতিহ্য ধরে রাখতে ঈদের পরই সংস্কার কাজ শুরু হবে।